ভ্যানগার্ড ডেস্ক
আজ ৩০ জুন ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৬ বছর আজ। ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন সাঁওতাল বিদ্রোহে নিরক্ষর সাঁওতালেরা রক্ত দিয়ে রচনা করেছিল ব্রিটিশসাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায়। মুক্তিকামী মানুষের কাছে সাঁওতাল বিদ্রোহ আজও প্রেরণার উৎস। তাই ৩০জুন ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস’ হিসেবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। প্রতি বছরের মতো এবারও দিবসটি পালিত হবে নানা আয়োজনে।
ভারতের ভাগলপুর, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলার প্রায় দেড় হাজার বর্গমাইল এলাকা দামিন-ই-কোহ্ বা‘পাহাড়ের ওড়না’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। ভাগলপুরের ভগনা ডিহি গ্রামের সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব এই চার ভাইয়ের নেতৃত্বে দামিন-ই-কোহ্ অঞ্চলে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ। ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন ভগনা ডিহি গ্রামে ৪০০ গ্রামের প্রতিনিধি ১০ হাজার সাঁওতাল কৃষকের বিরাট জমায়েত হয়। এই জমায়েতে সিধু-কানু ভাষণ দেন। এইসভায় সিদ্ধান্ত হয়, অত্যাচারী শোষকদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাইকে এক হয়ে লড়তে হবে। এখন থেকে কেউ জমির কোনো খাজনা দেবে না এবং প্রত্যেকেরই যত খুশি জমি চাষ করার স্বাধীনতা থাকবে। আর সাঁওতালদের সব ঋণ এখন বাতিল হবে। তাঁরা মুলুক দখল করে নিজেদের সরকার কায়েম করবে। ১০হাজার সাঁওতাল কৃষক সেদিন শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়েছিলেন। ভগনা ডিহি গ্রামের ওই সভার শপথ ছিল বিদ্রোহের শপথ। বিদ্রোহের মূল দাবি ছিল, ‘জমি চাই, মুক্তি চাই।’
জমিদার, মহাজন ও ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ওই বিদ্রোহে পরে এলাকার শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি, বিহারি, হিন্দু-মুসলমান গরিব কৃষক এবং কারিগররাও যোগ দেন। বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়া সিধু ও কানু পালকিতে এবং চাঁদ ও ভৈরব ঘোড়ায় চড়ে বিদ্রোহীদের পাশে থেকে উৎসাহ দিতেন।
পরাধীন ব্রিটিশ ভারতে সংগঠিত প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের অমর উপাখ্যানের নাম সাঁওতাল বিদ্রোহ। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধেও সিলেট অঞ্চলে সাঁওতাল জাতিগোষ্ঠী প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। বীর শহীদের আত্মদান বৃথা যায় না। সাঁওতালদের লড়াইয়ের চেতনাস্নাত এ ভূমিতে জনগণের প্রকৃত স্বাধীনতা আর মুক্তি অথবা বিপ্লব না হওয়া অব্দি লুটেরা শাসকদের উৎখাতে মহাবিদ্রোহের মশাল অবিচল প্রজ্জ্বলিতই থাকবে।