নিজস্ব প্রতিবেদক
মাতৃভাষা রক্ষার সংগ্রামে এগিয়ে আসুন, “মাতৃভাষায় শিক্ষা মোদের অধিকার, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক স্ব-স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত কর” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে খাগড়াছড়ি সদরের মারমা উন্নয়ন সংসদ মিলনায়তনে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশ থেকে এই দাবী জানানো হয়।
২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব নিশান চাকমার সঞ্চালনায় এবং উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সুনয় চাকমার সভাপতিত্বে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা। সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন প্রত্যয় চাকমা সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি থানা কমিটি, মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক রত্না তঞ্চঙ্গ্যা, যুব সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা, যুব সমিতির খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি সোনামনি চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুজন চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সোহেল চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে স্বীকৃতির আগ পর্যন্ত দিবসটি শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হতো কিন্তু জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত হলে জাতিসংঘের সদস্য দেশ সমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। মাতৃভাষার জন্য রক্ত ঝড়ার ঘটনা বিরল। নিজেদের মাতৃভাষার স্বীকৃতি আদায়ে যে জাতি এই বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল সেই জাতি অন্যান্য জাতিসমূহের মাতৃভাষাগুলোর প্রতিও সমান সম্মান দেখাবেন এটা স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ভাষার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকা জাতির এই বাংলাদেশে অপরাপর জাতিগোষ্ঠীগুলোর মাতৃভাষা এবং সংস্কৃতি সুরক্ষিত নয়।
বক্তারা আরও বলেন, ১৯৯৭ সালে সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির খ খন্ডের ৩৩নং ধারার খ উপধারার ২ নং অনুচ্ছেদে মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও চুক্তির ২৬টি বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের এখন পর্যন্ত নিজেদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যে তিনটি মাতৃভাষায় বই বিতরণ করা হয় সে সকল বিষয়ে পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। তাই বছরের শুরুতে আদিবাসী শিশুদের বই বিতরণরত রাষ্ট্র প্রধানের হাস্যোজ্জ্বল ছবি অনেকটায় আদিবাসীদের নিজেদের ভাষায় পড়তে পারার অধিকারের সাথে তামাশা করার শামিল।
সমাবেশে বক্তারা উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান রাখেন – নিজেদের অধিকারের বিষয়ে নিজেদেরকেই আগে সচেতন হতে হবে, সে অনুযায়ী নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে প্রয়োজনে লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে অধিকার ছিনিয়ে আনতে হবে।
সমাবেশ থেকে ৫ দফা দাবী উত্থাপন করা হয়ঃ
১) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে।
২) শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করে মাতৃভাষার মাধ্যমে পাঠদানের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
৩ ) দেশের উচ্চমান সম্পন্ন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, কারিগরি, ক্যাডেট ও অন্যান্য কলেজ) আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য ৫% কোটা চালু ও ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি করতে হবে।
৪) সকল মাতৃভাষার পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণী কক্ষ, সাধারণ ক্লাস রুটিনের সাথে অন্তর্ভুক্ত ও পাঠদানের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
৫) অতিদ্রুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
সমাবেশের শুরুতে সংগঠনটির উদ্যোগে সকালে খাগড়াছড়ি সদরের সূর্য শিখা ক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে র্যালী যোগে শহীদ মিনারে এসে ভাষা শহীদদের স্মরণে পূষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।