ভ্যানগার্ড ডেস্ক,
“করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব” এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২১ উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি’র উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাগড়ছড়ি সদরস্থ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ সকাল ১০ঘটিকার সময় এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক শ্রীমতি রত্না তঞ্চঙ্গ্যাঁর সঞ্চালনায় ও মহিলা সমিতি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রীমতি কাকলী চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিজেএসএস’র কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী সুভাষ কান্তি চাকমা। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন পিসিজেএসএস’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী প্রণব চাকমা, পিসিজেএসএস খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সভাপতি শ্রী আরাধ্যপাল খীসা, পিসিজেএসএস খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমা, মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শ্রীমতি দুর্গারাণী চাকমা, মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ববিতা চাকমা প্রমূখ।
বক্তারা বলেন বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে এই করোনাকালে নারী নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম নারীসহ এদেশের আদিবাসী নারীদের উপর নির্যাতনের চিত্র বিশেষ লক্ষণীয়। জুম্ম নারী সমাজ যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত, নিপীড়িত, অবহেলিত ও বঞ্চিত। উগ্র জাতীয়তাবাদী ও মৌলবাদী শক্তির জাতিগত চরম শিকার হচ্ছে জুম্ম নারী সমাজ। পার্বত্য চট্টগ্রামের ইদানিং কালের চিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় কতটা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে জুম্ম নারী সমাজ। খাগড়াছড়ি সদরের বলপেইয়া আদামে আলোচিত ধর্ষণের ঘটনা, খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের এক জুম্ম শিক্ষার্থীকে মুসলিম শিক্ষক কর্তৃক যৌন নিপীড়নের ঘটনা, কক্সবাজারের আলোচিত লাকিংমে চাকমার ঘটনা। এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে করোনাকালে আদিবাসী নারীদের উপর কতটা নিপীড়নের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রী সুভাষ কান্তি চাকমা বলেন, জাতিগত ও সামাজিক নিপীড়ন, সর্বোপরি উগ্র জাতীয়তাবাদী ও মৌল্বাদী শক্তির অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জুম্ম নারী সমাজকে সামিল করার লক্ষ্যে সকল ক্ষেত্রে সুযোগ বঞ্চিত এই নারী সমাজকে প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তাধারায় উদ্বুব্ধ হতে হবে। জুম্ম নারী সমাজকে পুরুষ বিদ্বেষী নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে প্রগতিশীল চিন্তাধারা লালনের আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, প্রগতিশীলতার আলোকে নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে না পারলে শোষিত ও বঞ্চিত এই জুম্ম নারী সমাজে প্রকৃত সম-অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা কখনো সম্ভব নয়।
বিশেষ অথিতির বক্তব্যে শ্রী প্রণব চাকমা বলেন, প্রীতিলতা, কল্পনা চাকমা, বেগম রোকেয়ারা যেভাবে সমাজে নারীদের অধিকার আদায় ও জাতীয় স্বার্থে লড়াই করে গেছেন এই জুম্ম নারীদেরকেও সেভাবে নারী মুক্তি ও জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব-জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে। জাতিগত নিপীড়নের পাশপাশি সামাজিক ও পারিবারিক জীবনেও জুম্ম নারী সমাজ বঞ্চনা-বৈষম্যের নিষ্পেষণে পদদলিত হয়ে আসছে। তাই জুম্ম নারী সমাজকে পুরুষশাসিত বেড়াজাল ও পারিবারিক দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে শাসক ও শোষক শ্রেণীর সর্ব প্রকারের জাতিগত ও সামাজিক নিপীড়ন, শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিশ্বের নারী মুক্তি আন্দোলনের সাথে সঙ্গতি রেখে আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রী প্রত্যয় চাকমা বলেন, আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম নারীদের অন্যতম সংগঠন “হিল উইমেন্স ফেডারেশন’র” ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৮৮ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের শিক্ষার্থী গৌরিকা চাকমা ও শীলা চাকমা’র নেতৃত্বে গড়ে উঠে এই সংগঠন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, জুম্ম অধিকারকামী সংগঠনগুলোর ভাঙা-গড়ার চরম সঙ্কত ও সংঘাতের কারণে আমাদের এই সংগঠনে আজ পর্যন্ত “হিল উইমেন্স ফেডারেশন” গঠন করা সম্ভব হয়নি। আগামী দিনে হিল উইমেন্স ফেডারেশন গঠনে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি’র প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।