সিএইচটি ভ্যানগার্ড
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস আজ। ১৯৮২ সালের ৯ আগস্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালকে আদিবাসী বর্ষ ঘোষণা করে। ফলশ্রুতিতে ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সংস্থাটির ৪৯/২১৪ বিধিমালায় প্রথম বৈঠকের দিন অর্থাৎ ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালনের ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে ৯ আগস্টকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী ৯০টি দেশে ৪৭৬ মিলিয়ন আদিবাসীরা পালন করে আসছে। বিশ্বব্যাপী আদিবাসী জনগণ তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়, ভূমির অধিকার, অঞ্চল বা টেরিটরির অধিকার, প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকার ও নাগরিক মর্যাদার স্বীকৃতি দাবীতে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
প্রতি বছর ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হলেও বাংলাদেশে ২০০৪ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। মূলত ২০০১ সালের ১৩ জুলাই বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম গঠনের পরে বেসরকারীভাবে বৃহদাকারে আন্তর্জাতিক দিবসটি পালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এই দিবসটি পালনের বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ শুভেচ্ছা বাণী এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের আদিবাসী জনগণের প্রাণের দাবীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করলেও ২০০৯ সালে সরকারের পালা বদলের পর আদিবাসী দিবস পালনের বিরোধিতাসহ “আদিবাসী” শব্দটি প্রয়োগেও সরকারী নির্দেশনার মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালের ৩০শে জুন পঞ্চদশ সংশেধনীর মাধ্যমে আদিবাসী জাতিসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবীর তোয়াক্কা না করে তাদেরকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে জাতি হিসেবে বাঙালি এবং দেশে বসবাসরত ভিন্ন ভাষাভাষী জাতিসমূহকে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী, সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে।
তদুপরি প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাট নির্মাণ, ইকোপার্ক, হোটেল-রিসোর্ট, পর্যটন ইত্যাদির নামে আদিবাসীদের ভূমি বেদখল করা হচ্ছে, আদিবাসী নারীদের উপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। আদিবাসীদের উপর উগ্র ইসলামী সম্প্রসারণবাদ চাপিয়ে দিয়ে ধর্মান্তরিত করণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে এই করোনা অতিমারির সময়ে এসবকিছু দ্বিগুণ বৃদ্ধিপেয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ভূমি কমিশনকে সচলের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যাকে নিরসন করে আদিবাসীদের তাদের ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। আদিবাসীদের তাদের মাতৃভাষায় পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব ভাষায় বর্ণমালা নেই বর্ণমালা উদ্ভাবনের কাজ করতে হবে। তাদের ঐতিহ্য,সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ভাষা রক্ষার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
এই করোনার সময়ে পিছিয়ে থাকা আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলো অর্থনৈতিকভাবে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। শিক্ষার অধিকার, চিকিৎসার অধিকার ইত্যাদি থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।
জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ আগস্ট আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়: “Leaving No One Behind: Indigenous peoples and the call for a new social contract.” বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর বাংলা করেছে- “কাউকে পিছনে ফেলে নয়: আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতু সামাজিক অঙ্গীকারের আহ্বান”।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়েছে কিন্তু কোন একটি জনগোষ্ঠীকে ফেলে রেখে দেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। দেশের মূলধারার জনগোষ্ঠীর সাথে আদিবাসীদের সমানতালে এগিয়ে নিতে দরকার আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি। রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসীদের ভূমি রক্ষা, শিক্ষা, চিকিৎসা, অন্ন, বস্ত্রসহ সর্বোপরি তাদের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব সংরক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে।