দীঘিনালা প্রতিনিধি
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি দীঘিনালা থানা কমিটির ৯ম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অংশুমান চাকমা।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টাগ্রামের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। চারিদিকে আমাদের উপর আগ্রাসন চলছে। আজ পাহাড় কিংবা সমতল আাদিবাসী কোথাও সুখে নেই। নিত্য নানা শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিনাতিপাত করতে হচ্ছে পাহাড়ীদের। অধিকার হারা জনজাতির এই দুর্বিষহ জীবন বহুকালের। এর পরিবর্তন রাতারাতি বদলাবে হবে না। এর জন্য জুম্মদের শিক্ষাদীক্ষায়, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে উন্নত হয়ে বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সকল কিছুতে সংগ্রাম করে আমাদের ঠিকে থাকতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি মানবিক ও বহুত্ববাদী সমাজ ও সংবিধান হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান দেশের চলমান পরিস্থিতি তার সম্পূর্ণ বিপরীত।
আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমতলের প্রগতিশীল, গণতন্ত্রমনা, লেখক, বুদ্ধিজীবীগণ আমাদেরকে সমর্থন যুগিয়ে চলেছেন । কিন্তু পাহাড়েরই আমাদের কতিপয় ভাই দিকভ্রষ্ট হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এবং আাদিবাসী শব্দকে নিয়ে নানা সমালোচনা করে আসছেন। যারা পাহাড়ের চুক্তি এবং আাদিবাসী ইস্যুতে বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতা করে চলেছেন সেই পথভ্রষ্টতা থেকে পরিবর্তন হলে তাদের প্রতি মহান নেতার আদর্শ ‘ক্ষমা গুণ ‘ প্রদর্শন করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
“আত্ননিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামসহ চুক্তি বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলুন “এই প্রতিপাদ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংসহতি সমিতি, দীঘিনালা থানা ৯ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিদায়ী কমিটির সভাপতি মৃণাল কান্তি চাকমার সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রত্যয় চাকমা, জনসংসহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সভাপতি শোভা কুমার চাকমাসহ সংগঠনটির কেন্দ্রীয়, জেলা, সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন বিদায়ী কমিটির যুব বিষয়ক সম্পাদক লোকপ্রিয় দেওয়ান, সামগ্রিক প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক চয়ন বিকাশ চাকমা।
সম্মেলনে খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রত্যয় চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিবেশ, পরিস্থিতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় বহু সংগঠনের জন্ম হয়েছে। তবে জন্মভূমি ও জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে সবচেয়ে সুন্দর ও সূচারুভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার একটি মাত্র সংগঠন রয়েছে। সেটি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। এই পার্টি জনগণের প্রয়োজনে সৃষ্টি হয়েছে, তাই জনগণের অগাধ -বিশ্বাস আর সমর্থন থাকায় রাষ্ট্রের সাথে দীর্ঘ ২ যুগ অধিক সশ্বস্ত্র সংগ্রাম করে সফলতা অর্জন করতে পেরেছে এবং রাষ্ট্রকে চুক্তিতে উপনীত হতে বাধ্য করেছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস রাষ্ট্র জুম্মদের সাথে বেঈমানি করেছে, তাই চুক্তি সম্পাদনের এত বছরেও চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেনি। আজ যদি চুক্তির পূর্ণাঙ্গবাস্তবায়ন হতো তাহলে পাহাড়ে নানা ভুঁইফোড় সংগঠন সৃষ্টি হতোনা এবং পাহাড়ে চুক্তির বিরোধী সংগঠন জন্মলাভ করতে পারতোনা। পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত দেখতে হতোনা। পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসতো। জনগণের যে অগাধ বিশ্বাস এখনও আছে সংগঠনের উপর সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে নেতৃত্ব ও আদর্শকে পরিচালনা করে নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রয়োজনে আরেকবার জুম্মজাতিকে রক্ত ও আত্নহুতির বিনিময়ে অধিকার ছিনিয়ে আনতে হবে বলে মন্তব্য করেন।
সম্মেলনে শ্রী প্রীতিময় চাকমা বলেন, জনসংহতি সমিতি একটি পরিক্ষিত ও দীর্ঘ সংগ্রামের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১০ ভাষাভাষী ১১ টি জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে। নীতি, আদর্শ, চিন্তা, চেতনায় ও ঐক্য সংহতি পোষণ করে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার প্রগতিশীল আদর্শ ও চেতনায় উজ্জীবিত করে জুম্ম জনগণকে সংগ্রাম মুখী করে তুলতে হবে। যেমনটা আগের জনসংহতি সমিতি করেছিল। তিনি আরও বলেন, নতুন কমিটিতে যারা দ্বায়িত্ব নিবেন তারা যেন খুবই সতর্ক থাকে। গণবিচ্ছিন্ন, গণবিরোধ, গণস্রোতের বাইরে গিয়ে কখনও পার্টির পরিপন্থীমূলক কাজ না করে। ব্যক্তির আচরণে -কার্যে সংগঠনের দুর্নাম হয় এরকম পার্টির শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করলে তাকে বহিষ্কার করা হবে বলে মন্তব্য করেন।
সম্মেলন থেকে মৃণাল কান্তি চাকমাকে সভাপতি, সমির চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং নলেজ চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট দীঘিনালা থানা কমিটি গঠন করা হয়।