বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আত্মমর্যাদা ও আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি আদায়ে আদিবাসীদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম জোরদার করুন”- এই প্রতিপাদ্যে আজ শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পল্লব চাকমা, উজ্জ্বল আজিম, রিপন চন্দ্র বানাই ও হিরন মিত্র চাকমার যৌথ সঞ্চালনায় এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সভাপতি অজয় এ মৃ’র সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী আবুল হোসেন রুবেল, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন এর সংগঠক নির্মল রোজারিও, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং মারমা, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ প্রমুখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীদের মাধ্যমে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে গণসমাবেশের সূচনা হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে বাঙালি ভিন্ন অপরাপর আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীদের স্বীকার করা হয়নি। চব্বিশের গণঅভ্যূত্থানের পরে আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম এই দেশ একটি বহুত্ববাদী ও বহুজাতিক দেশ হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করবে, কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি ঢাকার রাজপথে আদিবাসী ছাত্র-জনতার ন্যায্য দাবি জানানোর গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করে উগ্রবাদীরা ন্যাক্কারজনক হামলা করে।
বক্তারা আরও বলেন, যারা বৈষম্যকে জিইয়ে রাখতে চাই এরকম সংগঠন তার চরম বৈষম্যমূলক দাবির কারনে এনসিটিবি বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে বাংলাদেশের জনআকাঙ্ক্ষার গ্রাফিতি মুছে দিয়েছে । সেই অপশক্তির পেছনে কারা আছে সে প্রশ্নটা আমাদের তুলতে হবে। আমরা বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছি যে, এই অপশক্তি কর্তৃত্ববাদী সরকারের একটি অংশ যারা চায় না বাংলাদেশ একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ হোক।
চব্বিশের গণআকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার কিন্তু দেখা যাচ্ছে নানাক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বৈষম্যকে জিইয়ে রাখা হচ্ছে। আদিবাসী শুধুমাত্র একটি পরিচয় নয়, এর সাথে ভূমির অধিকার জড়িত, ভাষার অধিকার জড়িত, সংস্কৃতির অধিকার জড়িত, অস্তিত্ব রক্ষার অধিকার , ন্যায্যতার অধিকার জড়িত।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং মারমা বলেন, আজকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নানা অশুভ শক্তি দেশের নানা জায়গায় ওৎঁপেতে রয়েছে এই দেশের যা কিছু অর্জন সেসব অর্জনকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে। বাংলাদেশের মানুষ নব্বইয়ের আন্দোলন ভুলে গেছে, ঠিক তেমনি আমি বলতে চাই চব্বিশের চেতনার মশাল যদি প্রজ্জ্বলিত না করতে পারেন, বর্তমান সরকারে যারা দ্বায়িত্বে আছেন তাদের নীতি-আদর্শ যদি ঠিক না থাকে, অন্তর্ভুক্তিমূলক বহুভাষা-বহুধর্ম-বহুজাতির, বহুত্ববাদের দেশ গড়তে যদি সফল না হন তাহলে মানুষ চব্বিশও ভুলে যাবে।
এছাড়াও সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন ১৫ জানুয়ারি উগ্রবাদীদের হামলায় আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, ডন জেত্রা।
১৫ জানুয়ারির হামলায় আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আপনারা কখনো জানতে চেয়েছেন তারা কেন আমাদের মারতে চায়? কেন তারা আমাদের নিঃশেষ করতে চায়? আদিবাসী কোন শব্দ নয়, এটি একটি অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এটি আমাদের সবারই নৈতিক দায়িত্ব আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা করা।
হামলায় আহত ডন জেত্রা বলেন, শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য লড়াই করে যেতে হবে। আদিবাসীরা কোনদিন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না। তারা কারা? যে আমার পরিচয় নির্ধারণ করে দিতে চায়? আমার পরিচয় নির্ধারণ করবো আমি। বাংলাদেশে আদিবাসী আছে, ছিল থাকবে। অধিকার আদায়ে সিধু-কানু, এমএন লারমারা প্রান দিয়েছেন আমরাও আমাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজনে প্রান উৎসর্গ করবো।
গণসমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি, গানের দল সমগীত, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, গারো স্টুডেন্টস ফেডারেশন, এএলআরডি, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন আদিবাসী ও প্রগতিশীল ছাত্র, নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন।
অনুষ্ঠানে প্রতিবাদী গান পরিবেশনা করে আদিবাসী গানের দল- দি রাবুগা ও মাদল।