৮৬’র গণহত্যা দিবস আজ

খাগড়াছড়িপার্বত্য চট্টগ্রাম

ভ্যানগার্ড ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

আজ ১ মে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের ইতিহাসে রক্তাক্ত একটি দিন। ১৯৮৬ সালের আজকের দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকায় সেটেলার বাঙালি ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী মিলে জুম্মদের উপর হামলা, ঘরাবাড়ি লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। যার ফলে বহু জুম্ম আহত ও নিহত হয়েছেন এবং অনেক জুম্ম জীবন বাঁচানোর তাগিদে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছেন। যে হত্যাকান্ডের আজ ৩৫ বছর পূর্ণ হলেও জুম্ম জনগণ আজো বিচার পায়নি।

পানছড়ি হত্যাকান্ড: ১৯৮৬ সালের ১ মে সংঘটিত হয় পানছড়ি হত্যাকান্ড। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’র মতে, ১ মে এবং তার পরের দিনগুলোতে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেটেলার বাঙালিদের নিয়ে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে জুম্ম গ্রামগুলোতে প্রবেশ করে এবং স্বতোঃপ্রবৃত্তভাবে জুম্মদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ হত্যাকান্ডে ছয়টি গ্রামের ১৬ জনের অধিক লোককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হাজার হাজার লোক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলো হল- গোলকপুতিমা ছড়া, কালানাল, সূতকর্মা পাড়া, শান্তিপুর, মির্জাবিল, লতিবান, খেদারাছড়া মূখ, পূজগাং, লোগাং, হাতিমূর্তি পাড়া, সাডেশ্বর পাড়া, নাবিদাপাড়া এবং দেওয়ান বাজার ।

মহাজন পাড়ায় হামলা : একই দিন ১৯৮৬ সালের ১ মে খাগড়াছড়ি সদরের মহাজন পাড়ায়ও সেটেলার- রাষ্ট্রীয় বাহিনী মিলে আক্রমণ চালাইয়। এতে একজন নিহত ও ১৫ জনের অধিক জুম্ম আহত হয়। আনুমানিক ৩০টির অধিক জুম্ম ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

মাটিরাঙ্গা ও দীঘিনালা হত্যাকান্ড: মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ও তবলছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন জুম্ম গ্রামে হামলা চালায় সেটেলার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীরা। এতে প্রায় ৪০টির উপর জুম্ম ঘরবাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়। দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী, নারিকেল বাগান, পাবলাখালীসহ আরো অনেক জুম্ম অধ্যুষিত গ্রামেও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে সেটেলার বাঙালিরা মিলে হামলা ও লোমহর্ষক গণহত্যা চালিয়েছিল। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল জুম্মদের শত শত ঘরবাড়ি।

১ মে হতে কয়েকদিন ধরে চলা এসব হামলা ও হত্যাকান্ডে কয়েকশত জুম্ম নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যার সঠিক হিসাব এখনো জানা যায়নি। রাষ্ট্রীয় বিশেষ বাহিনী ও সেটেলারদের পরিকল্পিত এ হামলায় হাজার হাজার জুম্ম নিজ জায়গা-জমি, বসতভিটা ছেড়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে এই ঘটনাটি ৮৬’র গণহত্যা নামে পরিচিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর হতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত করা হয়, কিন্তু এসব হত্যাকান্ডের বিচার জুম্ম জনগণ আজো পায়নি।

Tags: , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস আজ
বাঘাইছড়িতে সন্তু লারমার দল কর্তৃক নিজেদের এক গুপ্তচর ও কিলারকে অপহরণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu