পাইচিমং মারমা
বেশ অনেক বছর আগে খাগড়াছড়ির বাম নেতার সাথে পাহাড়ি নারী ধর্ষণ নিয়ে তর্ক হয়েছিলো। তিনি একে নরমাইলাজ করার চেষ্টা করছিলেন এই বলে- যে সারা দেশেই তো ধর্ষণ হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা সারা দেশেই হয়। একে দেশব্যাপী আন্দোলনের সাথে এক করতে হবে। অনেকদিন ধরেই পার্টির সাথে আমার বোঝার গন্ডগোল বাড়ছিলো। আমি যুক্তি করেছিলাম- সারা দেশে পাহাড়ের মত করে ধর্ষকেদের রাষ্ট্র রেশন দিয়ে পোষে না। পাহাড়ে রাষ্ট্র ধর্ষণতন্ত্র কায়েম করেছে। এর ঐতিহাসিক কনটেক্সট আমলে আনলেই কেবল পাহাড়ে মানবাধিকার লংঘনের প্রতিকার করা যাবে।
সেই বাম নেতার মত অনেকে মনে করেন দেশে সুশাসন নিশ্চিত হলে পাহাড়ের ধর্ষণ পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। অনেকে মনে করেন পাহাড়ের সমস্যা আসলে উন্নয়নের সমস্যা। মানুষের উন্নয়ন হলেই হল্লাহাটি বন্ধ হবে। লোকজন কেওয়াজ করছে উন্নয়ন হচ্ছে না বলে।
একটা সহজ প্রশ্ন করি- দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলেই কি পাহাড়ে কাউন্টার ইনসারজেন্সি বা সেনা শাসন তুলে নেয়া হবে? রেপিস্ট সেটলারদের রেশন বন্ধ হবে? নিশ্চয় নয়। এবার আসি উন্নয়ন নিয়ে- যদি বাংলাদেশের শণৈ শণৈ উন্নতি হয়; জিডিপি প্রবৃদ্ধি গ্রাফ ফুঁড়ে আকাশে পৌঁছে যায়- তাতে পাহাড়ী জুমচাষীর কি ভাগ্যোন্নয়ন হবে? জুমচাষীর মেয়েটা সেটলার পাড়া দিয়ে নিশ্চিন্তে স্কুলে যেতে পারবে? হয়তো বা এই প্রশ্নে অনেক বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু একটা জায়গাতে কেউ নিশ্চয় দ্বিমত করবেন না- প্রবৃদ্ধির পয়সা দিয়ে রাষ্ট্র আর্মিকে আরও শক্তিশালী করবে। সামরিক ব্যয় চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। পাহাড়ের কোনায় কোনায় সেনা ছাউনি হবে সার্বভৌমত্বের নামে। উন্নয়ন মানে সেনা শাসন মতান্তরে সেটলারগিরির উন্নয়ন। আপনার ট্যাক্সের টাকায় রাষ্ট্রের রাজস্ব বৃদ্ধি হলেই আপনার নিরাপত্তা বা সুশাসনের উন্নয়ন হবে- তা নয়। জিডিপির সাথে সাথে মানবাধিকার লঙ্ঘন- দুটোই সমান্তরালে বাড়তে পারে, বাড়েও অনেক দেশে।
দেশের সাথে রাষ্ট্রের ফারাক আছে। এইটা বুঝারও ফারাক আছে। অনেকে রাষ্ট্রকে দেশ ভেবে ডিলিউশনে ভোগে। অনেকে অনেকভাবে তা বোঝায়, আমরা সেভাবে ইস্কুলে শিখে বড় হই। আমরা Unlearn করতে শিখি না। আমার মনে হয় এইসব ইল্যুশন, ডিলিউশন এর মিমাংসা হওয়া দরকার।
৭০ এর দশক থেকে কাউন্টার ইনসারজেন্সির নামে পাহাড়ি নারীর ধর্ষণ হয়ে করে আসছে। ধর্ষক প্রতিপালন করে আসছে রাষ্ট্র। এর মিমাংসা তাই ঐতিহাসিকভাবেই হতে হবে। কল্পনা চাকমার অপহরণকারী থেকে শুরু করে সবিতা চাকমা, তুমাচিং, সুজাতা, সম্প্রতি ধর্ষিত কিশোরী আর প্রতিবন্ধী নারী সহ অগণিত ধর্ষিতার বিচার সাংবিধানিক উপায়ে না হলে মানুষ অসাংবিধানিক পথ খুঁজে নেবে। মানুষকে বেশিদিন ইল্যুশনে বেঁধে রাখা যায় না।
সুত্রঃ ফেসবুক পোস্ট। https://www.facebook.com/pychingmong.marma
***প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।