বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় তীব্র খাদ্য সংকট

পার্বত্য চট্টগ্রামবান্দরবানসংবাদ

বার্তা কক্ষ

ছবিঃ যায়যায়দিন

বান্দরবানের থানচি উপজেলার মায়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা দূর্গম পাহাড়ী গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট । উপজেলার মেনহাত ম্রো পাড়া, বুলু ম্রো পাড়া, টাংখোয়াই ম্রো পাড়া, য়ংডং ম্রো পাড়ার প্রায় শতাধিক ম্রো পরিবার বাঁশ কোড়ল খেয়ে জীবনধারণ করছেন। খবর কালবেলা এবং যায়যায়দিন সুত্রে।

জানা যায়, থানচি উপজেলা ১নং রেমাক্রী ইউনিয়নের মায়ানমার সীমান্তবর্তী মেনহাত ম্রো পাড়া, বুলু ম্রো পাড়া, টাংখোয়াই ম্নো পাড়া, য়ংডং ম্রো পাড়া সহ আরো অন্তত ১৯টি গ্রামে মধ্যে ৯ টি গ্রামে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত বছরের বন্যায় ক্ষতি হওয়ায় জুমে ফলন না হওয়ার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে জুমের ফসল সংগ্রহ করার সম্ভব হয় নি। চলতি বছরের মে মাস থেকে তাদের খাদ্য সমস্যা দেখা দিলেও ধার দেনা করে কোন রকমে খেয়ে বেঁচে আছেন তারা। ঘরের নেই কোন ধান ও চাউল, প্রতিদিন জঙ্গলের সিদ্ধ বাঁশকুড়ুল খেয়ে বেঁচে আছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশুরা গ্রামে হাউ মাউ করে কাঁদতে আছে ক্ষিধের জ্বালা। পাশের বসা মায়ের চোখে মুখের আর্তনাদ বলে দিচ্ছে তাদের প্রচন্ড ক্ষুধা। রান্না করার মত ঘরের কিছু নেই। ঘরের কর্তারা বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ধার নিতে যাচ্ছে চাউল। ঘরের ফিরে যেন সন্তানদের মুখে এক মুঠোয় ভাত তুলে দিতে পারেন। আবার কেউ কেউ জুমের অপরিপক্ক ধান কেটে নিয়ে আসছে বাড়িতে। কাচাঁর ধান চুলা সিদ্ধ দিয়ে তারপরে শুকানো হয় চুলার উপরে পরে আবার চাউলের জন্য মাড়াই করতে হয় ঢেকিতে। ১ পট চাউলের সাথে বাঁশকোড়ল সিদ্ধ দিয়ে খেতে হয়েছে প্রতিদিন।

আদাপাড়ার বাসিন্দা ঙৈলিং ম্রো বলেন, লাপ্রাইওয়া / মেনহাক পাড়া, বুলু পাড়া, তাংখোয়াই পাড়া, য়ংডং পাড়া এদের অবস্থা প্রায় তিন মাস থেকে বাঁশ কোড়ল খাচ্ছে। আমি নিজের চোখে দেখছি। সরকার থেকে কিছু পায় না।

কারবারী বুলু ম্রো, মেনহাত ম্রো, এবং চিংক্রা ম্রো জানান, গত বছর অতিবর্ষণের কারণে চাষীরা তেমন ফসল পায়নি। থানচির রেমাক্রী ইউনিয়নে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ১৩টি পাড়া । এর মধ্যে ৪টি পাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবারে খাদ্য অভাব দেখা দিয়েছে। এদের ঘরে কোন চাল নেই । জঙ্গল থেকে বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ করে সিদ্ধ করে তিন বেলা খাবার খাচ্ছে।

তারা আরো বলেন, বাকি ১৯টি গ্রামের জুমের ধান প্রায় শেষের পথে । এদের মধ্যে যাদের ঘরে ধান আছে তারা একজন আরেকজনকে ধান দিয়ে সাহায্য করছে।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, সীমান্তবর্ত্তী পাড়াগুলোতে যাওয়ার মাধ্যম নদীপথ। তবে বান্দরবান জেলায় কয়েকদিন যাবত ভারী বৃষ্টি হওয়ায় সাঙ্গু নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে নদী পথে পণ্য আনা নেয়ার খরচও বেশি। ওইএলাকার মানুষ বেশির ভাগই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। দুর্গমতার কারণে থানচি সদর থেকে চাল নিয়ে যেতে পারছেন না তারা।

থানচি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো জানান, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ৪টি পাড়ায় ৫০-৬৪টি পরিবার বাস করে । ওই খানে ম্রো এবং ত্রিপুরারা বাস করে । তাদের অবস্থা খুবই করুণ। বাঁশকোড়ল খেয়ে জীবন ধারণ করছে। নদীতে পানির স্রোত বেশি এবং অর্থাভাব থাকায় সদরে এসে চাল কিনার মতো টাকা তাদের নেই।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন জানান, রেমাক্রি ইউনিয়নটা অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। লিক্রি, টাংখোয়াই পাড়া সহ আরো কিছু পাড়া নেটওয়ার্ক বিহীন। একেবারে যোগযোগ সহজে করা যায় না। ওইখানে বেশ কিছু পাড়ায় খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। (রোববার) দুটি নৌকা করে ১ মে.টন চাল আমরা পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে অতিবৃষ্টির কারণে জুমচাষ না হওয়ায় থানচি উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ২ হাজার ৩০০ পরিবার খাদ্য ঘাটতিতে পরে । পরে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় তৎকালীন সরকার ৪৬ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়।

Tags: , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

জেএসএস কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা সদস্য প্রশান্ত চাকমার প্রয়াণঃ জেএসএস এর শোক
মহালছড়িতে জেএসএস’র উদ্যোগে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu