বান্দরবানে পাহাড় সাবাড় করে গড়ে উঠছে ইটভাটা

পার্বত্য চট্টগ্রামবান্দরবান

সিএইচটি ভ্যানগার্ড

প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন করে বান্দরবনের রুমা উপজেলার দুর্গম নতুন রুমানা পাড়া ঘেঁষে পাহাড় কেটে ইটভাটা গড়ে তোলার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে গত ৩ মাস ধরে এস্কেভেটর দিয়ে বিশাল পাহাড় সাবাড় করে বনের মধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। 

স্থানীয়রা জানিয়েছে, প্রশাসনের অনুমতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়েই ঠিকাদার টেক্সটাইল মিলন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে ইটভাটা গড়ে তোলার কাজ চালিয়েছে।

জানা গেছে, রুমার নতুন রুমানা পাড়া ঘেঁষা পূর্ব-দক্ষিণে বিশাল জায়গা জুড়ে জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে দিয়েছে। ছোট-বড় তিনটি পাহাড় কেটে কাজ চলছে অবৈধ ইটভাটার। এসব পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি ভরাট হয়ে তিনটি ছড়ার পানির উৎসের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। অবৈধ ইটভাটা স্থাপনের পাহাড় কাটার দৃশ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডংয়ের পাদদেশ থেকেও সহজে লক্ষ্য করা যায়। ৩৫৮নং রুমা মৌজা ও সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের নতুন রুমানাপাড়া ও বিলাই ছড়ির বড়থলি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের দুপপানিছড়াপাড়া-জারুছড়ির সীমান্তে এই ইটভাটার (বিএমএফ) অবস্থান। 

রুমানা পাড়ার বাসিন্দা নলতিলির বম বলেন, পাহাড় কেটে ইটভাটা স্থাপনের কারণে বৃষ্টি হলেই কাদা মাটি গিয়ে পানির উৎসের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া ভাটায় লাখ লাখ মণ লাকড়ি (কাঠ) প্রয়োজন হবে। কাঠ পোড়ানো হলে আশেপাশের পাড়ার রিজার্ভ বনসহ গাছপালা আর থাকবে না।

স্থানীয় বাসিন্দা ভানরাম বম বলেন, ইটভাটার তৈরিতে পাহাড় কাটা ও পাড়া রিজার্ভ থেকে লাকড়ি গাছ কাটা নিয়ে পাড়াবাসীর মধ্যে পক্ষে বিপক্ষে দুভাগে বিভক্ত। ফলে বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে ইটভাটা তৈরিতে কেউ আর কিছু বলছে না। 

ইটভাটার শ্রমিক আমান উল্লাহ বলেন, শুরুতে ৫০/৬০জন ছিল, এখন কমে গেছে। অন্য শ্রমিকরা জানায়, প্রতি রাউন্ডে এক মাসে ৩ লক্ষ ইট পোড়ানো যাবে, তাই লাকড়ি অনেক লাগবে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য জেলায় ২০০৯ সাল থেকে ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনার ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব এলাকায় ইটভাটা স্থাপন না করার ব্যাপারে রয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা, কিন্তু এ নির্দেশ রয়ে গেছে কাগজে-কলমেই। 

বান্দরবনের পরিবেশ অধিদপ্তরের ইনস্পেক্টর আব্দুস সালাম বলেন, রুমায় ইটভাটার কোনও অনুমতি নেই। যদি কেউ করে থাকে, তা ভেঙে দিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি বা ছাড়পত্রের বিষয়ে ইটভাটার মালিক মিলন বলেন, অন্যান্য জায়গায় যেভাবে ইটভাটা হয়, সেভাবে করছি, বান্দরবনের কোন ইটভাটার অনুমতি আছে।

এই ব্যাপারে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন বলেন, ইটভাটা স্থাপনের কথা শুনেছি, ইটভাটা পরিদর্শন করে বৈধ কাগজপত্র কিংবা প্রশাসনের অনুমতি পত্র আছে কিনা তা দেখে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খবর সময় নিউজ টিভির 

Tags: ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

খাগড়াছড়িতে শহীদ সমর বিজয় চাকমা’র স্মরণে শোক সভা
ধর্ষণ চেষ্টায় অভিযুক্ত শিক্ষক ঢাকায় গ্রেফতার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu