পিসিপি খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার ৯ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত

খাগড়াছড়িপার্বত্য চট্টগ্রাম

সিএইচটি ভ্যানগার্ড, খাগড়াছড়ি

জাতীয় ও দলীয় দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করছেন নেতৃবৃন্দ

ঐতিহাসিক লড়াকু ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম ছাত্র সমাজের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার ৯ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

“পাহাড়ে শোষন-নিপীড়ন ও পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে ছাত্র সমাজ সামিল হোন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে আজ (২৮/০৯/২০২২) সকাল ১০ ঘটিকার সময় খাগড়াছড়ি সদরের মহাজন পাড়াস্থ এফএনএফ রেস্টুরেন্টে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের শুরুতে জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি ও মহান পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সুযোগ্য সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী প্রণব চাকমা এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন আজকের সম্মেলনের সভাপতি ও পিসিপি খাগড়াছড়ি কলেজ শাখার সংগ্রামী সভাপতি শ্রী কৃতিত্ব চাকমা।

ছাত্র নেতা শ্রী নিশান চাকমার সঞ্চালনায় ও পিসিপি খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার সংগ্রামী সভাপতি শ্রী কৃতিত্ব চাকমার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সংগ্রামী সহ-সভাপতি শ্রী প্রীতি খীসা, সাবেক ছাত্র নেতা ও জনসংহতি সমিতি মাটিরাঙ্গা থানা কমিটির সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক শ্রী দীপু চাকমা, সাবেক ছাত্র নেতা শ্রী জগদীশ চাকমা এবং পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী সুজন চাকমা (ঝিমিট) প্রমূখ।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার সংগ্রামী সদস্য শ্রী অভিলাষ চাকমা। এছাড়া সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদক শ্রী সুভাষ চাকমা।

মঞ্চে উপবিষ্ট নেতৃবৃন্দ

বক্তারা বলেন, যুগে যুগে কালে কালে যেখানেই কোন দেশ বা জাতির যখনি কোন সংকট নেমে এসেছে তখনি ছাত্র সমাজ-তরুণ সেই সংকট মোকাবেলার জন্য দুর্বারভাবে ঝাপিয়ে পড়েছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯’র গণ অভ্যুত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ, ৮৯ এ পিসিপি’র উত্থান, ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সবখানেই ছিল ছাত্র সমাজের ব্যাপক অংশগ্রহণ। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমান এই নাজুক অবস্থার প্রেক্ষিতে আমাদের তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামের এই অচলাবস্থাকে ভাঙতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আন্দোলনের ঐতিহাসিক একটি বিদ্যাপিঠ খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ। এই কলেজ থেকেই কত আন্দোলন, কত সংগ্রাম গজিয়ে উঠেছে তার ঠিক নেই। আজকে রাষ্ট্রযন্ত্রের নীলনকশার থাবায় কলেজে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। আজকে এই সম্মেলন কলেজের মাঠে বিশাল ছাত্র সমাবেশের মাধ্যমে হতে পারত কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র ভয় পায়। যদি এই কলেজে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা হয় তবে এখান থেকেই হয়তো গড়ে উঠবে সুদীর্ঘ-মিঠুন চাকমাদের মত নেতারা। তারা আমাদের ঐক্যকে ভয় পায়।

আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম ছাত্র সমাজ ব্যাপক রাজনৈতিক বিমূখ হয়ে পড়েছে। যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য কাজ করতে চান তারা কখনো রাজনৈতিক বিমূখ হতে পারেন না। কোন অজুহাত তারা দেখাতে পারেন না। যে সকল পরিস্থিতির কারণে আজকের ছাত্র সমাজ রাজনীতি বিমূখ হয়ে পড়ছেন সে সকল বিষয়ে তোমাদের কথা বলতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে, এই অচলাবস্থাকে সচল করতে হবে। তরুণ-ছাত্র সমাজের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোন আন্দোলন আজ পর্যন্ত সফল হয়নি, আপনার এগিয়ে না আসলে আমাদের আন্দোলনও সফল হবেনা।

শ্রী প্রণব চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা রাজনৈতিক সমস্যা, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা ভূমি সমস্যা, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা জনসংখ্যা ভারসাম্যগত সমস্যা, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা বিশেষ শাসন ব্যবস্থার সমস্যা। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে বুঝতে হলে এবং এর সমাধান করতে হলে এসব সমস্যা সম্পর্কে আমাদের ধ্যান ধারণা রাখতে হবে। শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ভিতর আবদ্ধ থাকলে হবেনা, পাশাপাশি আমাদের চারপাশের পারিপার্শ্বিক অবস্থাকেও বুঝতে হবে। ইতিহাস, ভুগোল, রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে, শিখতে হবে, জানতে হবে। তিনি বলেন, পড়াশোনার শত্রু হচ্ছে আত্মসন্তুষ্ঠি। যদি তুমি একটি বই পড়ার পর বল যে আমি বইটি পড়েছি, আমার সব জানা আছে- আমি সব পারি, আমার আর পড়া লাগবেনা তাহলে তোমার আর সবকিছু জানা হলোনা। আমরা পড়াশোনা এমনভাবে করবো যাতে আমাদের নিজের সাথে সাথে আমার পরিবার, আমার সমাজ, আমার জাত, আমার দেশ এর সুফল পায়। শুধুমাত্র চাকরি করার উদ্দেশ্যে যারা পড়াশোনা চালিয়ে যান তারা দিনশেষে একটি চাকরি করে বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে সংসার করেন। তাদের দ্বারা কখনো দেশ, সমাজ, জাত কোন সুফল পায়না। আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতিতে জ্ঞানে-গরিমায় পরিপূর্ণ মানুষের সংখ্যা খুব কম। তাই শোনা যায় বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক কর্মীদের দ্বারা জনসাধারণ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আপনাদের মত জ্ঞান-গরিমায়, শিক্ষাদীক্ষায় যারা অগ্রসর তারাই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির রক্ষার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করবেন এবং চলমান এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে জুম্ম সমাজকে মুক্তি দেবেন।

সম্মেলনে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ

আমাদের আদিবাসীদের জন্য উচ্চশিক্ষা ও চাকরির জন্য ৫% কোটা বরাদ্দ যা এখন বাতিল করে দেয়া হয়েছে। আমাদের ন্যায্য অধিকার এ ৫% কোটা পুনর্বহালের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক স্ব-স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর কথা থাকলেও তা পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের মাধ্যমে এখানকার ভূমি সমস্যা সমাধানের কথা থাকলে আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি বিপরীতে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে উস্কে দিয়ে ভূমি কমিশনের বৈঠক ভন্ডুল করা হয়েছে। ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরনার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসের কথা থাকলেও তা হয়নি সর্বোপরি জুম্ম জনগণের মুক্তির সনদ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও তার যথাযথ ও পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি এসকল অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তোমাদের এগিয়ে আসতে হবে সামনের সারিতে। সামনের সারিতে এসে নেতৃত্ব দিতে হবে।

সবশেষে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ কমিটির ৯ম সম্মেলনের প্যানেল ঘোষণা ও শপথবাক্য পাঠ করান পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সংগ্রামী সভাপতি শ্রী মৃণাল কান্তি চাকমা।

নবাগত কমিটিতে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন শ্রী বিকাশ চাকমা, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন শ্রী অভিলাষ চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন শ্রী সুনীল ত্রিপুরা প্রমূখ। নবাগত কমিটিকে শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে বরণ করে নেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদক শ্রী সোহেল চাকমা।

সবশেষে সম্মেলনের সভাপতি ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি শ্রী কৃতিত্ব চাকমার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলন সমাপ্ত করা হয়।

Tags: , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

ভরদ্বাজ মুনি’র শহীদের ৩ দশক আজ
সাফজয়ী বাংলাদেশ ও আদিবাসী নারীদের অংশগ্রহণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu