পিসিপি খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির ৬ষ্ঠ সম্মেলন সম্পন্ন

খাগড়াছড়িপার্বত্য চট্টগ্রাম

সিএইচটি ভ্যানগার্ড, খাগড়াছড়ি

জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করছেন নেতৃবৃন্দ

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির ৬ষ্ঠ সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। আজ (১৯ মার্চ ২০২২) সকাল ১০ ঘটিকার সময় খাগড়াছড়ি সদরস্থ খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টারে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনের শুরুতে জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সম্মেলনের সম্মানিত প্রধান অতিথি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী তথ্য ও প্রচার সম্পাদক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির বিদায়ী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শ্রী সচেতন চাকমা।

“পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নই একমাত্র সমাধান, জুম্ম জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ছাত্র ও যুব সমাজ অধিকতর সামিল হোন” – এই স্লোগানকে সামনে রেখে আজকের সম্মেলনে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী বিজয় চাকমা সঞ্চালনায় ও বিদায়ী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শ্রী সচেতন চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী তথ্য ও প্রচার সম্পাদক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ছাত্র নেতা ও জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি শ্রী প্রীতি খীসা, সাবেক ছাত্র নেতা ও জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমা, মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রীমতি ববিতা চাকমা, যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী জ্ঞান প্রিয় চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী রাজ্যময় চাকমা প্রমূখ। এছাড়াও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয়, জেলা, থানা ও ইউনিয়ন কমিটির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনের শুরুতে এমএনলারমাসহ জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী সকল শহীদদের স্মরণে একমিনিট শোক নিরবতা পালন করা হয়। সম্মেলনে প্রতিনিধি বক্তব্য প্রদান করেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী পিন্টু চাকমা, পানছড়ি থানা কমিটির সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক রিমেশ চাকমা, মহালছড়ি থানা কমিটি সংগ্রামী সভাপতি শ্রী সুভাষ চাকমা, দীঘিনালা থানা কমিটির সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক শ্রী রিংকু চাকমা, বাঘাইছড়ি থানা কমিটি সংগ্রামী সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী সুকেশ চাকমা প্রমূখ।

মঞ্চে উপবিষ্ট নেতৃবৃন্দ

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রী রাজ্যময় চাকমা বলেন, লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে যে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের উত্থান সে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এখনো তাদের লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। প্রতিষ্ঠার পর হতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে নিজেদের প্রত্যক্ষভাবে সরব রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল, নারী ধর্ষণ, খুন, গুম, হত্যা ইত্যাদির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আগামী দিনের লড়াই সংগ্রামে, চুক্তি বাস্তবায়নের মহান আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে নবাগত কমিটির সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।

শ্রী প্রত্যয় চাকমা বলেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ জুম্ম ছাত্র সমাজের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন। যখনি জুম্ম জনগণের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন, শোষণ-বঞ্চনা, নারী ধর্ষণের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তখন দুর্বার গতিতে সেসব কিছুর মোকাবেলা করেছে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ এখনো প্রত্যাশা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চলমান সংকট থেকে উত্তরণ করতে পারে একমাত্র ছাত্র পরিষদ। পৃথিবীতে যখনি কোন জাতি, রাষ্ট্র কিংবা অঞ্চলের উপর কোন সংকট এসেছে তখনি ছাত্র ও তরুণ সমাজ প্রতিহত করেছে। অতীতেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের উপর আসা সমস্ত সংকটকে প্রতিহত করেছে ছাত্র ও তরুণ সমাজ, আগামীদিনের চুক্তি বাস্তবায়নের রক্ত পিচ্ছিল ইস্পাত লড়াই সংগ্রামেও ছাত্র সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে ছাত্র সমাজকে এক একটি রাইফেলের বুলেটের ন্যায় হতে হবে এবং বারুদের ন্যায় এই পাহাড়ী ছাত্র পরিষদকে সমস্ত অশুভ সশক্তির বিরুদ্ধে বিস্ফোরিত হতে হবে।

শ্রী প্রীতি খীসা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠার পর হতেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সূচনা হয়েছিল। জনসংহতি সমিতিরর সশস্ত্র আন্দোলনের পাশাপাশি পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে অবস্থান নিয়ে জুম্ম জনগণের দাবী-দাওয়াগুলো সরকারের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাইফেলের মুখোমুখি হয়ে নিজেদের অধিকারের কথা বলেছে এই পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ। দীর্ঘ সময়ের পথ পরিক্রমায় পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ আজ বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তথাপিও সকলের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য কিন্তু এক। চুক্তি পূর্ববর্তী সময়ের পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এবং চুক্তি উত্তর পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের এক সোনালী অধ্যায় রয়েছে এই পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে। সেই সোনালী অধ্যায়কে ভুলে যাওয়া চলবেনা। সেই সোনালী অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে জুম্ম জনগণের একমাত্র মুক্তির সনদ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজপথের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামব্যাপী গণ আন্দোলনের জোয়ার সৃষ্টি করতে হবে এই পাহাড়ী ছাত্র পরিষদকে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ভিন্ন ভাষাভাষী জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষা তথা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। জুম্ম জনগণের আন্দোলনের ইতিহাসে ছাত্র ও তরুণ সমাজের ভূমিকা অগ্রগণ্য। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ প্রতিষ্ঠার পূর্বে পাহাড়ী ছাত্র সমিতি জুম্ম ছাত্র সমাজকে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং জুম্ম জনগণের ন্যায্য অধিকারের জন্য লড়াই করেছিল। পরবর্তীতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ সৃষ্টি হলে পাহাড়ী ছাত্র সমিতির কার্যক্রম তেমন আর লক্ষ্য করা যায়নি। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে ছাত্র ও তরুণ সমাজ দেশ ও জাতিকে নতুন দিশা দিয়েছে। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদও এক যুগান্তকারী সংগঠন, যে সংগঠন জুম্ম জনগণের আন্দোলনকে পূর্বেও নতুন দিশা দিয়েছে আগামীতেও জাতীয় মুক্তি তথা জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নতুন দিশা দেবে এই পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ। সমাজের যোগ্যতম সন্তানরাই জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে, সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত হয়। কাজেই আজকে যারা নবাগত কমিটিতে যুক্ত হবেন ধরে নেয়া তারাই সমাজের যোগ্যতম সন্তান। আগামী দিনে জুম্ম জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কঠিন-দুর্বার সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে, সেই সংগ্রামে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রক্তপিচ্ছিল পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন।

সবশেষে পুরাতন কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন প্যানেল উপস্থাপন করা হয়, প্যানেলের উপর কারোর আপত্তি না থাকায় শ্রী সচেতন চাকমাকে সভাপতি, শ্রী সোহাগ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও শ্রী রিবেং চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট ৬ষ্ঠ খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির প্যানেল উপস্থাপন ও শপথবাক্য পাঠ করান পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সুযোগ্য সিনিয়র সহ-সভাপতি শ্রী জগদীশ চাকমা।

Tags: , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

লোগাং গণহত্যার ৩ দশক
বান্দরবানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ’র এক সদস্য নিহত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu