কক্সবাজার জেলার উখিয়া,টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্ষ্যং,শিলখালী,মনখালী,লাতুরিখোলা,লম্বাঘোনা,উলুবনিয়া ইত্যাদি গ্রাম ও এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক চাকমা জাতিগোষ্ঠীর লোকজন শত শত বছর ও যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে।
১৯৪৭/৪৮ দেশ ভাগের পূর্বে কক্সবাজার জেলার চাকমা জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা নিজ নিজ ভূমিতে জুম চাষ করে অতীব সুখে শান্তিতে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং আরাকানের ওয়েলাডং,তামাইংসা,লেমাইং,ক্ষামংছিক,তম্ব্রু ও নাইক্ষ্যংছড়ী ঘুমধুমের চাকমাদের সাথে এক ভুখন্ডে বসবাসসহ সামাজিক যোগাযোগ বেশ ভালোই ছিলো।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর এক ভুখন্ড হতে দু ভূখন্ডে ভাগের ফলে দু দেশের নাগরিক হয়ে যায়।
কক্সবাজার জেলার চাকমারা কেউ ভালো নেই। কারণ, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর চাকমাদের শত শত বছর ও যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসা গ্রাম, জুম ভূমি সবই রাষ্ট্র কর্তৃক বন বিভাগের বনাঞ্চল ঘোষনা করার ফলে আজ নিজ ভূমিতে পরবাসী এবং কঠিনতর জীবন যাপনে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
এখন চাকমাদের কে নিজ ভূমি ও নিজ গ্রামে বন বিভাগের ভিলেজার হিসেবে পরাধীন হয়ে বসবাস করতে হয়।
জুম করার আর কোন জুম ভূমি নেই।
তাই,বাধ্য হয়ে দিন মজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। দারিদ্রতার কারণে ছেলে মেয়েদের শিক্ষা, চিকিৎসা, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না।
আরো সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হচ্ছে ঘরে ঘরে বন মামলার আসামী । ৫০% অধিক চাকমা বন বিভাগের মামলায় আসামী হয়ে অনেকে জেলে খাটছে, অনেকে ফেরারি জীবন কাটাচ্ছে এবং অনেকে খেয়ে, না খেয়ে মামলা পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছে।
অথচ,
অভিযোগ আছে বন বিভাগের বন প্রহরীরাই গাছ চুরি করে। মামলা করে চাকমাদের বিরুদ্ধে।
এই হচ্ছে এখানকার বাস্তবতা। অপরদিকে প্রায় সময় চাকমাদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা, আক্রমণ, নারী নির্যাতন, ধর্ষনের ঘটনার শিকার হতে হয়।
তাই,চাকমাদের সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও জানমালের নিরাপত্তার অভাব এবং প্রতিনিয়ত রোহীঙ্গা সন্ত্রাসীদের ভয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। প্রতিটি মুহুর্তে শুধু ভয় ও আশংকার জীবন।
এই চাকমাদের দুঃখের জীবন কে দেখবে? কে বাঁচাবে? কে রক্ষা করবে? এইসব চাকমাদের দুঃখের কাহিনী হয়তো অনেকের অজানা। তাই,কোন মানবিক সংস্থা থাকলে কক্সবাজার জেলার চাকমাদের পাশে দাঁড়ানোর বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
দীর্ঘ ৬০/৭০ বছর অধিক নিজ ভুমিতে পরবাসীর জীবন ও সীমাহীন দারিদ্রতার কারনে চাকমাদের নিজ পোষাক,সংস্কৃতি পর্যন্ত আর রক্ষা করতে পারছেনা। যাকে বলে অমানবিক জীবন!!!
বিঃদঃ হয়তো অনেকেই চাকমা শব্দটি বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, ঐ অঞ্চলের বর্তমান প্রজম্ন যাদের বয়স ৩০/৩৫ বছর – তাহারা তঞ্চঙ্গ্যা লিখে থাকেন এবং ৩৫ বছর বয়সের উর্দ্ধে বয়সীরা এখনো চাকমা লিখে থাকেন এবং নিজেদেরকে চাঙমা পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যাহা কম বেশী সকলেই জানেন। সুতরাং,কেন চাকমা লিখলাম, ইহার দায় আমার নই।
***প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।