সিএইচটি ভ্যানগার্ড
“পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি তথা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত প্রতিক্রিয়াশীল, সুবিধাবাদী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলুন” -এই স্লোগানে খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তিন দিন ব্যাপী ১৩তম জাতীয় সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন হয়েছে আজ।
আজ রবিবার (২৮মে ২০২৩) খাগড়াছড়ি সদরের পানখাইয়া পাড়ার মারমা উন্নয়ন সংসদ কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন উড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তিন দিন ব্যাপী (২৮, ২৯, ৩০মে) ১৩তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়েছে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জনসংহতি সমিতির বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী সুভাষ কান্তি চাকমা, দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সহ সভাপতি শ্রী বিভূ রঞ্জন চাকমা এবং বেলুন উড়িয়ে শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রী সুভাষ কান্তি চাকমা।
সম্মেলনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী তথ্য ও প্রচার সম্পাদক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা ও সংগঠনের খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমার সঞ্চালনায় প্রথম দিনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ- সভাপতি শ্রী বিভূ রঞ্জন চাকমা। সম্মেলনের শুরুতে ব্যাজ ও উত্তরীয় পরিধান করিয়ে অতিথিদের বরণ করে নেয়া হয়। এরপর শোক প্রস্তাব পাঠের মধ্য দিয়ে জুম্ম জনগণের অধিকারের আদায়ের আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাসহ সকল বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট মৌনব্রত পালন করা হয়।
সম্মেলনে উপস্থিত অতিথি ও প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষক সহ সকলের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী প্রণব চাকমা। সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী সুজন চাকমা (ঝিমিট), যুব সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা শ্রী সুদর্শন চাকমা, জুম্ম শরনার্থী কল্যাণ সমিতির শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক শ্রী আনন্দ মোহন চাকমা, মহিলা সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও পানছড়ি উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শ্রীমতি রত্না তঞ্চঙ্গ্যা, খাগড়াছড়ি জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী স্বদেশ প্রীতি চাকমা, উপজাতীয় ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি শ্রী রবিশংকর তালুকদার, ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রী সন্তোষিত চাকমা বকুল। এছাড়াও সম্মেলনে বন্ধুপ্রতীম সংগঠন গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের প্রধান শ্রী শ্যামল কান্তি চাকমাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর উদ্বোধনী ভাষণের মধ্য দিয়ে তিন দিন ব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী সুভাষ কান্তি।
সম্মেলনে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সকল অপশক্তি, জুম্ম জাতীয় অস্তিত্বকে বিলীন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সকলের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের নিকট জোর দাবী জানান। চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার দীর্ঘ সময় ধরে কালক্ষেপন করে আসছে এবং জুম্ম জনগণকে মিথ্যা আশার বাণী শুনিয়ে বছরের পর বছর ধরে বোকা বানিয়্যে আসছে বলেও বক্তারা অভিযোগ করেন। ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের কথা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা ভূমি সমস্যা কিন্তু ভূমি কমিশনকে অকার্যকর ও অথর্ব করে রাখা হয়েছে। চুক্তি মাধ্যমে আসা জেলা পরিষদকে নির্বাচন বিহীন ক্ষমতাসীন দলের লোকদের দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত করা হচ্ছে ফলত অনিয়ম, দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে জেলা পরিষদ। অতিশ্রীঘ্রই স্থানীয় ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে পার্বত্য জেলা পরিষদকে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালনার দাবী জানানো হয়।
বক্তারা আরো বলেন, উন্নয়নের নামে প্রতিনিয়ত জুম্মদের ভূমি বেদখল, নারী ধর্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট, উগ্র ইসলামি সম্প্রসারণবাদের মাধ্যমে জুম্মদের ধর্মান্তরিত করণ, লাভ জিহাদের ফাঁদে ফেলে নারীদের ধর্মান্তরিত করণ, ডিভাইড ইন রুল পলিসি প্রয়োগ করে জুম্মদের মাঝে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রাখা ইত্যাদি নীল নকশা প্রণয়নের মাধ্যমে জুম্মদের জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণের যে ষড়যন্ত্র তা এখনো জিইয়ে রেখেছে এদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র তথা শাসকগোষ্ঠী। এসকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠনসহ আপামার জুম্ম জনগণকে জনসংহতি সমিতির আগামীদিনের লড়াই সংগ্রামে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
১ম অধিবেশনের সভাপতি শ্রী বিভূ রঞ্জন চাকমার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে ১ম অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। ১৩তম জাতীয় সম্মেলনে জনসংহতি সমিতির ৬০০ জন প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন।