ভেনগার্ড প্রতিবেদক, ঢাকা
দীর্ঘ দুই যুগের সশস্ত্র আন্দোলনের পর ১৯৯৭ সালের ২ডিসেম্বর জুম্ম জনগণের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যেকার সম্পাদিত ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির স্বাক্ষরের ২৩তম বর্ষপূর্তি আজ। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবীতে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। মানববন্ধন ও সমাবেশের পর শাহবাগ হতে র্যালি শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
মানববন্ধন ও সমাবেশে পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজ্যময় চাকমা’র সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সহ-সম্পাদক সাইথোয়াইঅং মারমা। মানববন্ধন ও সমাবেশে সংহতি রেখে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জনতা সংসদ (বাজস) এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মোশারফ হোসেন শামীম, ন্যাপ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক বিডি রহমত উল্লাহ।
উক্ত সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আম্বেদকর চাকমা, সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন পিসিজেএসএস খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিন্ধু কুমার চাকমা, পিসিজেএসএস খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সভাপতি প্রত্যয় চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সভানেত্রী কাকলি খীসা প্রমূখ।
সংহতি বক্তব্যে অথিতিবৃন্দরা জাতিগত সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংবিধানে স্থান দিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। প্রতিনিয়ত পাহাড় ও সমতলে আদিবাসীদের উপর দমন-পীড়ন, ভূমি বেদখল, ধর্মীয় উপাসনালয় ভাংচুর, নারী ধর্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে এদেশে ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীদের ধ্বংস করার পায়তারা করে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় বিশেষ মহল। পাহাড়ে-সমতলে অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সমানতালে আন্দোলন করার প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেন। দীর্ঘ ২৩ বছর অপেক্ষা করিয়েও পাহাড়ী মানুষদের আশা-আকাঙ্খা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়ন পাহাড়ী মানুষদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। রাষ্ট্রের কাছে ২৩ বছর হয়তো খানিক সময় কিন্তু আমাদের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগুলোর এই ২৩টি বছর যেন হাজার হাজার আলোকবর্ষ। এই ২৩বছরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়ী জনগোষ্ঠীগুলো জাতিগতভাবে ধ্বংসের শেষপ্রান্তে এসে দাড়িঁয়েছে। তাই আর ক্ষালক্ষেপন না করে পাহাড়ী মানুষদের একমাত্র আশা-ভরসার এই পার্বত্য চুক্তি অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানান।
বক্তারা বলেন, পাহাড়ে ১৯৯৭ সালে যে শান্তির কপোত উড়েছিল মনে হয়েছিল পাহাড়ে চুক্তির পর শান্তিই বিরাজ করবে। কিন্তু আজ চুক্তির ২৩টি বছর অতিক্রান্ত হলেও আমরা শান্তি তো দূরে থাক নিরাপদে বাড়িতেও অবস্থান করা যায়না। আজকে ২৩তম বর্ষপূর্তি উৎসাহ উদ্দীপনায় উদযাপনের পরিবর্তে আমরা আজ শাহবাগে মিলিত হয়েছি-রাজপথে দাঁড়িয়েছি চুক্তি বাস্তবায়নের দাবীতে। কেন এই ২৩টি বছর ধরে আমাদের অপেক্ষা করানো হলো? আরও কত বছর অপেক্ষা করানো হবে? পাহাড়ে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করার কথা থাকলেও উল্টো চুক্তির পর ভূমি বেদখলের মাত্রাটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সমতল হতে প্রতিনিয়ত ছিন্নমূল বাঙ্গালীদের পাহাড়ে এনে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জুম্মদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে, জুম্মদের ভূমিতে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তান আমল হতেই মুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চলে পরিণত করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখা হয়েছে। জিয়া-এরশাদ শাসনামলে লক্ষ লক্ষ মুসলিম বাঙ্গালী অনুপ্রবেশ করানো হয় যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। যার কারণে পাহাড়ে বর্তমান জনসংখ্যার অনুপাত বাঙ্গালী ৫২% আর পাহাড়ী মাত্র ৪৮%। নিজ ভূমিতে জুম্মরা আজ সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি আনয়নে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় দিন দিন অসন্তোষ বেড়ে চলেছে। জুম্ম জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে, জুম্মরা নিজেদের অধিকার নিয়ে এদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীদের সাথে সমানতালে এগিয়ে যেতে চাই। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হলে পাহাড়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দিন দিন বৃদ্ধি পাবে, আবারও চুক্তি পূর্ববর্তী অবস্থা যদি ফিরে আসে জুম্ম জনগণকে দোষ দেয়ার কিছু থাকবেনা। ২৩ বছর ধরে জমে থাকা স্ফুলিঙ্গ বিস্ফোরিত হলে পাহাড়কে আর শান্ত করা যাবেনা বলেও বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।