সিএইচটি ভ্যানগার্ড, খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ২০তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। “প্রগতিশীল চিন্তাধারা অন্বেষণে বিপ্লবী ছাত্রসমাজ এগিয়ে আসুন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে আজ ২৯ এপ্রিল ২০২২, শুক্রবার সকাল ১০ঘটিকার সময় খাগড়াছড়ি সদরস্থ খাগড়াপুর এলাকায় এ কাউন্সিল সম্পন্ন হয়।
২০তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন শ্রী ঝিমিট চাকমা; সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন শ্রী সোহেল চাকমা (বিজু) এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন শ্রী বিজয় চাকমা।
কাউন্সিলের শুরুতে জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও সম্মেলনের প্রধান অতিথি শ্রীমতি কাকলী খীসা মহোদয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী রাজ্যময় চাকমা। এরপর পিসিপির ২০তম জাতীয় সম্মেলন বেলুন উড়িয়ে শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বিদায়ী কমিটির সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রতিভাস চাকমার সঞ্চালনায় ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বিদায়ী কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী রাজ্যময় চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শ্রীমতি কাকলী খীসা। উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী সুভাষ কান্তি চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ছাত্র নেতা ও জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সংগ্রামী সহ-সভাপতি শ্রী প্রীতি খীসা; সাবেক ছাত্র নেতা ও জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমা (জুকি); সাবেক ছাত্র নেতা ও জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সংগ্রাম ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শ্রী সুমেধ চাকমা; সাবেক ছাত্র নেতা ও যুব সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সভাপতি জ্ঞান প্রিয় চাকমা প্রমূখ। এছাড়াও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ২০০ (দুইশত) জন প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষক কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন।
কাউন্সিলের শুরুতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যে সকল বীর যোদ্ধারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন সে সকল বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট মৌনব্রত পালন করা হয়। কাউন্সিলের উদ্বোধক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী সুভাষ কান্তি চাকমার উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে কাউন্সিলের সূচনা করা হয়।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাসে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা তুলে ধরেন এবং সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে জুম্ম জনগণের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদকে মূখ্য ও অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। ঐতিহাসিক লড়াকু এই ছাত্র সংগঠনের জন্ম হয়েছিল লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে। সেই থেকে আজ অবধি তার আপন স্বমহিমায় জুম্ম ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্ব ও জুম্ম জনগণের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে রাজপথের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে রয়েছে এই পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহযোগী সংগঠন হিসেবে আগামী দিনের লড়াই-সংগ্রামে জনসংহতি সমিতির আশু লক্ষ্য বাস্তবায়নে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়। দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের একমাত্র মুক্তির সনদ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির স্বাক্ষরের দুই যুগ অতিক্রান্ত হলেও চুক্তি এখনো বাস্তবায়ন করেনি সরকার। সেই চুক্তি বাস্তবায়ন না করে উপরন্তু প্রতিনিয়ত চুক্তি বিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্র। সেজন্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে আরো গতিশীল ও চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে জোড়ালো আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
যুগে যুগে কালে কালে তরুণ ছাত্র সমাজই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আত্মবলিদান দিয়েছে, জাতীয় মুক্তির পথ সুগম করেছে; আগামী দিনের লড়াই সংগ্রামে অতীতের পাহাড়ী ছাত্র ছাত্র পরিষদ যেভাবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে নবাগত কমিটিকেও সেভাবে ইতিহাস সৃষ্টি করতে হবে।
সবশেষে ২০তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের প্যানেল উপস্থাপন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী রাজ্যময় চাকমা; এবং প্যানেলের উপর কারোর আপত্তি না থাকায় ৩১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী রাজ্যময় চাকমা।
এরপর বিদায়ী পিসিপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের বিদায়ী সম্মাননা ও অতিথি বৃন্দদের সম্মাননা স্মারক ক্রেস প্রদান করা হয়। সবশেষে বিদায়ী কমিটির সভাপতি ও আজকের কাউন্সিলের সভাপতি শ্রী রাজ্যময় চাকমার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কাউন্সিলের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।