আদালতের নিষেধাজ্ঞাও অকার্যকর
ভ্যানগার্ড ডেস্ক
আদালতের নিষেধাজ্ঞা বা প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা ভেঙে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় চলছে ‘উন্নয়ন কার্যক্রম’। পৌরশহরের স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে বিহারসংলগ্ন জলাধার বালু ভরাটের পর নির্মাণ করা হচ্ছে সেমিপাকা ভবন। এমন প্রেক্ষাপটে স্থানীয় রাখাইনরা আশঙ্কা করছেন, দখলবাজিতে হারিয়ে যেতে পারে পুরোনো বৌদ্ধবিহার মঠ।
সমকালের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বৈধ দলিলপত্র না থাকলেও বিএস জরিপে নাম আছে- শুধু এই অজুহাতে বায়নাচুক্তিতে জমির দখল বুঝে পেতে কোমর বেঁধে কুয়াকাটায় মাঠে নেমেছে ভূমিখেকোরা। মতানৈক্য ভুলে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনেকেই সহায়তা করছেন এই দখলদারদের। প্রমাণ রয়েছে, ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি হিসেবে একসনা ও স্থায়ী বন্দোবস্তমূলে দেওয়া হচ্ছে সরকারের রাজস্ব। এ জলাধার ভরাট হওয়ায় পৌরবাসীসহ বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হলেও অভিযোগ রয়েছে, দখলদারদের সহায়তা করছেন খোদ পৌর মেয়র।
ঢাকা থেকে কয়েক দফা কুয়াকাটায় আসা নাগরিক কমিটির সরেজমিন অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে রাখাইন সম্প্রদায়ের দেবালয়ের সম্পত্তি ও পুরোনো বৌদ্ধমন্দিরের পাশের জমি দখলের অপচেষ্টা চলছে। ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে থাকা এসব সম্পদ রক্ষার দাবিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক আবেদনও করেছেন ভুক্তভোগী রাখাইনরা।
বৌদ্ধবিহার লাগোয়া জলাধারের মালিকানার দাবি জানিয়ে কথা বলছেন রাখাইনদের বৌদ্ধবিহার কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় হাজি আ. মান্নান হাওলাদার, ইলিয়াস হোসেন, সোহেল হোসেন, মো. সাইফুল ইসলাম, তেমং রাখাইন, শহিদ দালাল ও মিজানুর রহমান। মালিকানার প্রমাণপত্র না থাকলেও বিএস জরিপে এরা সবাই এই জমির মালিক।
বায়না দলিলমূলে সম্প্রতি এই জলাধারের মালিকানা দাবি করেছেন ঢাকার আবাসন ব্যবসায়ী কুদরাত ই খোদা। আবার পৌর আওয়ামী লীগের একটি অংশ দলীয় অফিস করার নামে জমি দখলে নিয়ে পুনরায় ছেড়ে দিয়েছে।
রাখাইন অধিকার আন্দোলনের নেত্রী কুয়াকাটা কেরানীপাড়ার বাসিন্দা লুমা মগনী বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা বা প্রশাসন দিয়ে বাধা দিয়ে রক্ষা করা যাচ্ছে না বৌদ্ধবিহার, রাখাইন পল্লিসহ দেবালয়ের সম্পত্তি। বিএস জরিপ রেকর্ডে ৮৫ শতক জমি কুয়াকাটার পুরোনো বৌদ্ধবিহারের নামে থাকলেও বিহারটির উত্তর দিক আগেই বেদখলে গেছে। এখন দক্ষিণ পাশে এবং প্রবেশপথের পশ্চিম দিকে বালু ভরাটের কাজ শেষে চলছে সেমিপাকা ভবন নির্মাণের কাজ।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এক মাস ধরে মহিপুর থানা সদরের বিএনপি নেতা ও ভূমির মধ্যস্বত্বভোগী জাহাঙ্গীর মৃধা, সোহেল হোসেন, লতাচাপলী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলীসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নামধারী লোকজন পরিত্যক্ত জলাধারটি বালু ভরাটের কাজে খোলাখুলিই সহায়তা করেছেন। এ সময় পৌরশহরের পানি নিস্কাশনের কালভার্টসহ খানিকটা অংশ বেড়া দিয়ে দখল করে নেন কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর শাহ আলম হাওলাদার, সাবেক প্যানেল মেয়র পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পান্না হাওলাদার, সাবেক কাউন্সিলর আ. রহিম হাওলাদারসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
তবে এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর শাহ আলম হাওলাদার বলেন, বিরোধিতাপূর্ণ জমি দলিল না হওয়ায় ছেড়ে দিয়েছি।
ওই জমির মালিক দাবিদার মিজানুর রহমান বলেন, ইউএনওর কাছে আবেদন করায় জমিতে ১৪৪ ধারা জারি হয়। তা ভঙ্গ করে দখলদাররা কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।
আরেক দাবিদার ইলিয়াস হোসেন কাগজপত্রের ত্রুটির কথা স্বীকার করে বলেন, আদালতে তেমং রাখাইন জমির মালিকানার দাবিতে মামলা করেছেন। তার পক্ষে চূড়ান্ত রায় পেলে মালিকানা জটিলতা মিটবে।
একইভাবে মালিকানা প্রমাণের কোনো কাগজপত্র না থাকলেও বিএনপি নেতা হাজি আ. মান্নান হাওলাদারের নামে ২২ শতাংশ জমি বিএস হয়েছে। তিনিও কোটি টাকায় কুদরাত ই খোদার কাছে বায়না চুক্তিতে তা বিক্রি করেছেন।
জলাধার ভরাটে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা নেই, এমন দাবি করে কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, পানি নিস্কাশনের ড্রেনের কাজ চলমান রয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তবে বৌদ্ধবিহারের জায়গা দখলের সুযোগ নেই।
সূত্রঃ সমকাল